ভারত নিউজ – আমাদের প্রত্যেকের শরীরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। এছাড়া মেয়েরা রুপ সম্পর্কে সচেতন, তার জন্য তারা অনেক ধরনের কসমেটিকস ব্যবহার করে থাকে। এই কসমেটিকস একদিকে যেমন ব্যয়বহুল তেমনি এর বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। কসমেটিকস গুলি কতটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাজারে ছাড়া হয় সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাই আমরা আমাদের বাড়ির আশেপাশে অনেক রকমের ভেষজ উপাদান রয়েছে সেগুলোর গুণগতমান জেনে আমরা ব্যবহার শুরু করতে পারি।
বর্তমানে আমাদের অনেকেরই বাড়িতে অ্যালোভেরা গাছ টবে লাগানো থাকে কিন্তু আমরা এর উপকারিতা সম্বন্ধে অজ্ঞাত। এবার আপনাদের জানাবো অ্যালোভেরার উপকারিতা। ঘৃতকুমারী যা আমরা অনেকে অ্যালোভেরা বলে থাকি। এই উদ্ভিদ হৃদযন্ত্র,স্নায়ুতন্ত্র,মুখের ঘা,পেটের সমস্যা,রূপ-সৌন্দর্য তৈরি করতে ও আরো বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রতিদিন এক গ্লাস করে অ্যালোভেরা পাতার নির্যাসের শরবত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। অনেক সময় অ্যালোভেরা পাতার নির্যাসের শরবত রাস্তাঘাটে বিক্রি করতে দেখা যায় কিন্তু এইগুলি খাওয়া উচিত নয় এর থেকে ভালো আপনি ঘরে বসে বানান।অ্যালোভেরা পাতার নির্যাসের সাথে জল মিশ্রিত করে শরবত বানিয়ে যদি আপনি নিয়মিত পান করেন তাহলে আপনার হৃদযন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্র ঠিক থাকবে।মুখে ঘা,পেটের সমস্যায় অ্যালোভেরা পাতার নির্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।মুখে ঘা বা জিভে ঘা হলে অ্যালোভেরা পাতা দুদিকের পাতলা স্তরটি তুলে দিয়ে মুখের ভিতরে রাখলে ঘা সেরে যাবে।অ্যালোভেরা পাতার নির্যাস বের করে মুখে লাগালে মুখের চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রভূতি থেকে উপশমের জন্য অ্যালোভেরা পাতার রস খুবই উপকারী।প্রচণ্ড গরমে অ্যালোভেরা পাতার রস শরবত করে খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে।অ্যালোভেরা পাতার রস মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।এছাড়াও অ্যালোভেরা অনেক এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অ্যালোভেরা গাছ নার্সারিতে পাওয়া যায়। ওখান থেকে কিনে আপনি আপনার ঘরে লাগাতে পারেন।একটি গাছের কুশি থেকে আরেকটি গাছের জন্ম হয়।

অ্যালোভেরা কন্ডিশনার বানানোর নিয়ম – প্রাচীন কাল থেকেই অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারি ব্যাবহার হয়ে আসছে। এর অনেক গুনের মধ্যে একটি হলো এটি চুলের উজ্জলতা বাড়াতে কন্ডিশনারের কাজ করে। এছাড়া চুল পড়া রোধ এবং খুশকি প্রতিরোধে অসাধারণ অ্যালোভেরা।খুশকি দূর করতে মেহেদিপাতার সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে লাগাতে পারেন চুলে। মাথা যদি সব সময় গরম থাকে তাহলে পাতার শাঁস প্রতিদিন একবার তালুতে নিয়ম করে লাগালে মাথা ঠাণ্ডা হয়৷ অ্যালোভেরার রস মাথার তালুতে ঘষে এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া বন্ধ হবে এবং নতুন চুল গজাবে। শ্যাম্পু করার আগে আধঘণ্টা অ্যালোভেরার রস পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন। এতে চুল ঝরঝরে ও উজ্জ্বল হবে।নিয়মিত অ্যালোভেরার শরবত খাওয়া চুলের জন্য ভালো। এতে চুল পড়া অনেকাংশে কমে যায়। খুশকি কমাতেও এটি সহায়ক। অ্যালোভেরায় আছে অ্যালোমিন নামক উপাদান, যেটি চুল লম্বা করতে সাহায্য করে।বাড়িতে বসে অ্যালোভেরার কন্ডিশনার বানানোর নিয়ম-প্রথমে একটি ধারালো ছুরি দিয়ে প্রতিটি গাছের পাতা থেকে পুরু সবুজ চামড়া সরিয়ে পাতার ভেতরের পরিষ্কার জেলি যতটা সম্ভব বের করে নিতে হবে। আস্তরণটি কাটার সময় সতর্ক থাকুন যেন জেলি কাটা অংশের সাথে পড়ে না যায়।ব্লেন্ডারে এই জেলি নিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করুন, জল দেবার দরকার নেই। বের করার আগে দেখুন যেন সবটুকু জেলি খুব ভাল ভাবে ব্লেন্ড হয়।এবার এই মিশ্রণটি ভাল করে ছেঁকে নিন। জেলি ছেঁকে নেবার পর যেন তা এর মধ্যের সাদা অংশ থেকে আলাদা হয়ে আসে।এবার চুলে শ্যাম্পুর পরে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত এই জেলি ভাল করে ম্যাসাজ করে মেখে নিন। চাইলে অন্য কোনও কন্ডিশনারের সঙ্গে মিশিয়েও এটি ব্যবহার করতে পারেন।
আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে অ্যালোভেরার জুস। অ্যালোভেরা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। দূষিত রক্ত দেহ থেকে বের করে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে দীর্ঘদিন আপনার হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে। কিছু ক্ষতিকর পদার্থ দেহের মধ্যে প্রবেশ করে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করতে পারে। ফলে তা দেহের জন্য মোটেও ভাল কিছু নয়।এই সকল ক্ষতিকর পদার্থ দেহ থেকে অপসারণ প্রয়োজন। অ্যালোভেরার রস পান করলে দেহের ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশ করতে পারে না। আর যদি প্রবেশ করেও ফেলে, তাহলেও অ্যালোভেরার জুস পানে তা অপসারণ হতে সাহায্য করে। এই ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার জুসের গুন অপরিসীম। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যালো ইমোডিন, যা স্তন ক্যান্সার ছড়ানো থেকে রোধ করে। এছাড়াও অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরা অনেক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।

অ্যালোভেরার একটি অনন্য উপাদান ত্বকের যত্নে। ত্বক ভালো রাখতে অ্যালোভেরার কোনও বিকল্প আছে বলে তো মনে হয় না। কারণ অ্যালোভেরা শুধু ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে না, সেই সঙ্গে নানা ধরনের স্কিন সমস্যা দূরে রাখে। সৌন্দর্যের একেবারে চূড়ায় পৌঁছোতে চাইলে আপনার গাইড হতেই পারে প্রাকৃতিক এই উপাদানটি।অ্যালোভেরাতে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে বিউটি প্রোডাক্ট হিসেবে অ্যালোভেরার জনপ্রিয়তায় কোনোদিন ভাটা পড়ে নি।অ্যালোভেরার ৫টি উপকারিতা – শুষ্ক ত্বককে স্বাভাবিক করতে অ্যালোভেরা দারুণ কাজে আসে। উজ্জ্বল এবং নরম ত্বক পেতে আপনাকে সাহায্য করবে। ব্রণ এবং কালো দাগ আটকাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।ত্বকের অতিরিক্ত তেলাভাব কমায়, শুধু তাই নয় স্কিনের বন্ধ হয়ে যাওয়া ছিদ্রগুলোকেও খুলে দেয়। এটি ব্রণর মধ্যে জমে থাকা মৃত চামড়া তুলে ফেলে এবং ত্বক মসৃণ করে।

একেবারে পুরোপুরি কসমেটিক ব্যবহার ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয় কিন্তু আমরা কিছুটা অংশে রাসায়নিক কসমেটিকসের ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে ভেষজ পদ্ধতিতে রূপচর্চা করতে পারি এবং মুড়ি-মুড়কির মতো ওষুধ না খেয়ে গাছ গাছড়ার রস খেয়ে কিছুটা হলেও প্রতিকার পেতে পারি। সবচেয়ে বড় কথা আয়ুর্বেদ ভেষজ উপাদানের বিশেষ কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই । অ্যালোভেরা গাছের জন্য বিশেষ কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয়না, টবে লাগালে মাঝে মাঝে জল দিলেই হয়ে যায় ওর চারাও ওর নিজের নিয়মে বেরোয় এবং বড় হয়। যাদের বাগান রয়েছে মাটিতে লাগাতে পারেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন