নেপালের তরাই অঞ্চলে কপিলাবস্তুর অন্তর্গত লুম্বিনী উদ্যানে 566 খ্রিস্টপূর্বাব্দে বুদ্ধের জন্ম হয় । তাঁর পূর্বনাম ছিল সিদ্ধার্থ । তাঁর পিতার নাম ছিল শুদ্ধোধন এবং মাতার নাম মায়া দেবী। রাজপ্রাসাদের ঐশ্বর্যের মধ্যে বড় হলেও তিনি সুখী ছিলেন না। তিনি মানুষের জরা , ব্যাধি ও মৃত্যু দেখে ব্যাথিত হন। তিনি জীবাত্মার মুক্তির পথ খুঁজতে লাগলেন । 29 বছর বয়সে তাঁর একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সংসারে মায়ার বন্ধন ক্রমেই দৃঢ় হচ্ছে এই ভেবে তিনি একদিন গভীর নিশীথে সকলের অগোচরে গৃহত্যাগ করেন । তাঁর এই গৃহত্যাগ ইতিহাসে ' মহাভিনিষ্ক্রমণ ' নামে পরিচিত ।
সিদ্ধার্থ 49 দিন তপস্যা করে দিব্যজ্ঞান অর্জন করেন ও বুদ্ধ নামে পরিচিত হন । তিনি lসারনাথে লুম্বিনী উদ্যানে পাঁচজনের কাছে তাঁর ধর্ম প্রচার করেন । তাঁর ধর্মপ্রচারের ঘটনাটি ' ধর্মচক্র প্রবর্তন ' নামে পরিচিত । তিনি আর্য সত্য পালনের জন্য ও পার্থিব তৃষ্ণা অবসানের জন্য আটটি সত্যের সন্ধান দেন যা ইতিহাসে ' অষ্টাঙ্গিক মার্গ ' নামে পরিচিত। এই আটটি মার্গ হল - সৎ বাক্য , সৎ কর্ম , সৎ জীবিকা , সৎ চেষ্টা, সৎ চিন্তা, সৎ সচেতনতা, সৎ সংকল্প, সৎ দৃষ্টি । অষ্টাঙ্গিক মার্গ ছাড়াও বুদ্ধ আর্য সত্য পালনের কথা বলেছিলেন । আর্য সত্য হলো ইহজগত দুঃখময় , দুঃখের কারণ আছে , দুঃখ নিবৃত্তির উপায় আছে , দুঃখ নিবৃত্তির শ্রেষ্ঠ পথ কি তা জানতে হবে। বুদ্ধ মধ্যপন্থার কথা বলেছিলেন । মধ্যপন্থা কথার অর্থ হল কঠোর কৃচ্ছসাধনা ও বিপুল ভোগবিলাস দুটোই পরিহার করে মাঝামাঝি পথ নেওয়া । মূলত গৃহী মানুষের জন্যই তিনি মধ্যপন্থার কথা বলেছিলেন । তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সংঘবাসের উপরে গুরুত্ব দিয়েছিলেন । সংঘগুলি ছিল গণতান্ত্রিক ও স্ব-শাসিত । এছাড়া তিনি পঞ্চশীল পালনের কথা বলেন। পঞ্চশীল হল পাঁচটি গুণের সমাহার। এই পাঁচটি গুণ হলো অহিংসা, পরের সম্পত্তি আত্মসাৎ না করা, ব্যভিচার না করা, মদ্যপান না করা ও মিথ্যা কথা না বলা।
বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম ছিল ত্রিপিটক। পিটক কথার অর্থ ঝুড়ি । ত্রিপিটক তিনটি ভাগে বিভক্ত -বিনয় পিটক, সূত্ত পিটক, অভিধর্ম পিটক। বিনয় পিটকে রয়েছে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের জীবন যাপন, সুত্ত পিটকে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের নৈতিক দিকগুলি, অভিধর্ম পিটকে রয়েছে আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক দিকগুলি। আনুমানিক 486 খ্রিস্টপূর্বাব্দে মল্ল রাজ্যের রাজধানী কুশিনগরে বুদ্ধ দেহত্যাগ করেন। তাঁর এই দেহত্যাগ ইতিহাসে মহাপরিনির্বাণ নামে পরিচিত ।
বুদ্ধের মৃত্যুর পর তাঁর বাণী ও উপদেশসমূহ সংকলনের উদ্দেশ্যে তাঁর শিষ্যরা কয়েকটি সঙ্গীতি আয়োজন করেন , এগুলি বৌদ্ধ সংগীতি নামে পরিচিত । সংগীতি কথার অর্থ সম্মেলন। প্রথম বৌদ্ধ সংগীতি আয়োজন হয়েছিল বুদ্ধের মৃত্যুর পর রাজগৃহে অজাতশত্রুর পৃষ্ঠপোষকতায় মহাকাশ্যপ এর সভাপতিত্বে। এই সম্মেলনে বুদ্ধের বাণীগুলি বিষয় অনুসারে ত্রিপিটক এ বিভক্ত করা হয়। দ্বিতীয় বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয় বৈশালীতে কাকবর্ণর রাজত্বকালে। সভাপতিত্ব করেন যশ। এই সম্মেলনে বৌদ্ধধর্ম থেরবাদী ও মহাসংঘিকা এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয় অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় পাটলিপুত্রে। এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তিস্য। এই সম্মেলনে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য ধর্মদূত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি অনুষ্ঠিত হয় কনিষ্কের রাজত্বকালে 78 খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীরে মতান্তরে জলন্ধরে বসুমিত্রর সভাপতিত্বে। এই সম্মেলনে বৌদ্ধধর্ম হীনযান ও মহাযান এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এছাড়া এই সম্মেলনে বৌদ্ধ বিভাষা রচিত হয়। হীনযানরা বুদ্ধের মূর্তি পূজায় বিশ্বাসী ছিলনা অপরদিকে মহাযানীরা বুদ্ধর ওপর দেবত্ব আরোপ করে। হীনযানরা ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় আত্মার মুক্তির কথা বলেন, মহাযানরা বুদ্ধভক্তি দ্বারা সকলের মুক্তির কথা বলেন। বুদ্ধ সামাজিক ভেদাভেদ দূর করে সকলকে মর্যাদা দিয়েছিলেন। তিনি নারীদেরকেও সমান অধিকার দিয়েছিলেন। গণিকা আম্রপালিকে তিনি শিষ্যত্ব দিয়েছিলেন।
এখান থেকে যে প্রশ্নগুলি করতে হবে বুদ্ধের জন্ম কবে কোথায় হয়েছিল, ধর্মচক্র প্রবর্তন বলতে কী বোঝো, অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলতে কী বোঝো, আর্যসত্য কি, পঞ্চশীল কি, ত্রিপিটক কি, ক'টি বৌদ্ধ সংগীতি আয়োজিত হয়েছিল, হীনযান ও মহাযান বলতে কী বোঝ, বুদ্ধের মৃত্যু কবে হয়, মধ্যপন্থা বলতে কী বোঝো ?
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি। সবাই বাড়িতে থাকবে সুস্থ থাকবে।
কোনও সমস্যা থাকলে এই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে জানাতে হবে - 8597510299
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন