খাদ্যের সংজ্ঞা - যে সকল আহার্য সামগ্রী গ্রহণ করলে জীবদেহের বৃদ্ধি , পুষ্টি, শক্তি উৎপাদন ও ক্ষয়পূরণ হয় এবং রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে ওঠে তাকে খাদ্য বলে । খাদ্যে ছটি উপাদান বর্তমান , যথা- শর্করা, প্রোটিন, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন, খনিজ এবং জল ।
ভিটামিন - C
উৎস - উদ্ভিজ্জ - কমলালেবু, আম ,পেয়ারা, টমেটো, পালং শাক ।
প্রাণিজ- মাতৃদুগ্ধ, মাছ, মাংস, গরুর দুধ ( তবে ফোটানো দুধে থাকেনা ) ।
কাজ- দাঁতের মাড়িকে সুস্থ রাখে, লোহিত রক্ত কণিকা ও অণুচক্রিকা গঠনে সহায়তা করে, দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
অভাবজনিত লক্ষণ - এই ভিটামিনের অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়, রক্তহীনতা, অস্হি ও দন্তক্ষয়, ক্ষত না শুকনো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে ঠান্ডা লাগা , রক্তহীনতা প্রভৃতি হয় ।
ভিটামিন - A
উৎস : উদ্ভিজ্জ - গাজর , মটরশুঁটি ,টমেটো, পালংশাক, বাঁধাকপি । প্রাণিজ - কড , হাঙ্গর ও হ্যালিবাট মাছের যকৃত নিঃসৃত তেলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় । তাছাড়া ,দুধ ,ডিমের কুসুম , মাখন , মাছ ইত্যাদিতে এই ভিটামিন পাওয়া যায় ।
কাজ - এই ভিটামিন প্রাণীদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে , রেটিনার রড কোষ গঠনে সহায়তা করে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে , রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে , স্নায়ুকলার পুষ্টি ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে, অস্থির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।
অভাবজনিত লক্ষণ - রাতকানা এবং অন্ধত্ব বা জেরপথ্যালমিয়া রোগ , চামড়া খসখসে হয়ে যায় এবং ফেটে যায় ,মেরুদন্ড এবং করোটির অস্থি বৃদ্ধি হয় ,করনিয়া বিনষ্ট হয় ।
ভিটামিন - D
উৎস : উদ্ভিজ্জ - উদ্ভিজ্জ তেলে এবং বাঁধাকপিতে অল্প পরিমাণে পাওয়া যায় ।
প্রাণিজ - মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল বিশেষ করে কড এবং হ্যালিবাট লিভার অয়েল । তাছাড়া ,ডিম, মাখন ও দুধে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।
কাজ - ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণে সহায়তা করে ,অস্থিগঠনে সহায়তা করে , দন্ত গঠন ও দন্ত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে , রিকেট রোগ প্রতিহত করে ।
অভাব জনিত লক্ষণ - এই ভিটামিনের অভাবে শিশুদের রিকেট এবং বড়দের অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ হয় ,দাঁতের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও দন্ত ক্ষয় হতে দেখা যায় , রক্তের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায় এবং ক্যালসিয়াম বিপাক ব্যাহত হয় ।
ভিটামিন - K
উৎস : উদ্ভিজ্জ - বাঁধাকপি ,পালংশাক , টমেটো , আলফা- আলফা শাক ইত্যাদি ।
প্রাণিজ - দুধ ,মাখন , শূকরের যকৃৎ নিঃসৃত তেল ইত্যাদি ।
কাজ - এই ভিটামিন যকৃতে প্রোথ্রমবিন সংশ্লেষে সহায়তা করে , রক্তে প্রোথ্রমবিনের পরিমাণকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে , রক্ত তঞ্চনে সহায়তা করে ।
অভাবজনিত লক্ষণ - রক্তের প্রোথ্রমবিনের পরিমাণ কমে যাওয়া , হেমারেজ বা রক্তক্ষরণ হওয়া ।
ভিটামিন - বি কমপ্লেক্স
উৎস : উদ্ভিজ্জ - ঢেঁকি ছাঁটা চাল , লাল আটা , ঈস্ট , বাদাম ,ভাতের ফ্যান ,পালং শাক, বাঁধাকপি ,টমেটো ,অঙ্কুরিত ছোলা ,মুগ ইত্যাদি । প্রাণিজ - দুধ, ডিম ,যকৃৎ , মাছ , মাংস ইত্যাদি ।
কাজ - দেহের বৃদ্ধি ,রক্তকোষ গঠন , মিউকাস পর্দা সুস্থ রাখা , পরিপাক শক্তি বৃদ্ধি করা ,বেরিবেরি , পেলেগ্রা , অ্যানিমিয়া প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধ করা ,স্নায়ু কোষ এবং স্নায়ু সুস্থ রাখা ইত্যাদি ।
অভাবজনিত লক্ষণ - বেরিবেরি সাধারণত B1 এর অভাবে হয়, অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা সাধারণত ফলিক অ্যাসিড এবং বি টুয়েলভ এর অভাবে হয় ,পেলেগ্রা রোগ হয় , মুখে ঘা এবং জিহ্বায় ঘা হয় , ক্ষুধামান্দ্য, চুল ওঠা , হাত - পা জ্বালা ইত্যাদি রোগ হয় ।
পটাশিয়াম - K
উৎস : উদ্ভিজ্জ - শাকসবজি এবং ফলমূল ।
প্রাণিজ - মাছ ,মাংস ও ডিম ।
কার্যকারিতা - প্রাণীদেহে এই লবণ স্নায়ুকোষ গঠন করে , পেশী সংকোচন রোধ করে , CO2 গ্যাস পরিবহন করে ।
অভাব জনিত লক্ষণ : এই লবণের অভাবে প্রাণীদেহে স্নায়বিক বিশৃঙ্খলা ,অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ,পেশী সংকোচন শিথিলতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায় ,এই লবণের অভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং পাতা ঝরে পড়ে ।
আয়োডিন - I
উৎস : উদ্ভিজ্জ - শাকসবজি, আপেল ,লেবু ,সামুদ্রিক লবণ ,মটরশুটি বিট ইত্যাদি ।
প্রাণিজ - সামুদ্রিক মাছ ,সামুদ্রিক মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল ,ডিম, দুধ ইত্যাদি ।
কার্যকারিতা - থাইরক্সিন গঠনে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে ।
অভাব জনিত লক্ষণ - এর অভাবে প্রাণীদেহে গলগন্ড রোগ হয় ।
ফসফরাস - P
উৎস : উদ্ভিজ্জ - দানা - শস্য , সিম , মটরশুঁটি ,পালং শাক , টমেটো ইত্যাদি ।
প্রাণিজ - দুধ ,ডিম, মাছ ,মাংস ইত্যাদি ।
কার্যকারিতা - প্রাণীদেহে অস্থি ও দন্তগঠনে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে, নিউক্লিয়াস গঠন এবং কোষ বিভাজনে সহায়তা করে।
অভাবজনিত লক্ষণ - লবণের অভাবে প্রাণীদেহে রিকেট , অস্থিক্ষয় ,দন্তক্ষয় ইত্যাদি রোগ দেখা যায় । উদ্ভিদের সাধারণ বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং পাতা ঝরে পড়ে ।
লৌহ - Fe
উৎস : উদ্ভিজ্জ - কাঁচকলা, মোচা ,কলমিশাক ,মটরশুটি ,ভুট্টা ,গম, নারকেল ইত্যাদি ।
প্রাণিজ - মাছ ,মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি ।
কার্যকারিতা - উদ্ভিদের ক্লোরোফিল সংশ্লেষে এবং প্রাণীদেহে হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে ।
অভাবজনিত লক্ষণ - উদ্ভিদের ক্লোরোসিস বা পান্ডুরোগ হয় । এই রোগে গাছের সবুজ অংশ হলুদ বর্ণ ধারণ করে , প্রাণীদেহে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গিয়ে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া রোগ হয় ।